অর্থনীতি কাকে বলে?

0

অর্থনীতি কি? | অর্থনীতি কাকে বলে?

একটি মানব শিশুর জন্ম নেয়ার পর তার প্রয়োজন হয় নানা ধরণের জিনিসপত্রের। বলা চলে, তার বেড়ে উঠা থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত নানা জিনিসের প্রয়োজন এবং অভাব দুটোই থাকে। প্রয়োজনীয় জিনিস যেমনঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান।

এসব মৌলিক চাহিদা ছাড়াও প্রয়োজন হয় শিক্ষা, চিকিৎসা, আনন্দ প্রভৃতি। আর এসব চাহিদা ছাড়াও আরো সীমাহীন চাহিদার সৃষ্টি হয় কিংবা অভাববোধ তৈরি হয় মানব জীবনে। যা কিনা অর্থনৈতিক কার্যক্রম হিসেবে চিহ্নিত করা হয় অনেক সময়। আর এই অর্থনৈতিক বিষয় গুলোকে অর্থনীতির আওতায় ফেলা হয়। অর্থাৎ, অর্থনীতি বলা হয়। মূলত, অর্থনীতি কাকে বলে তা ই আলোচনা করা হবে বিস্তারিত ভাবে আজকের আর্টিকেল টি তে। চলুন তবে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।

সম্পর্কিত পোস্ট:

অর্থনীতি কি? | What Is Economics?

অর্থনীতি কে বলা হয় সমাজ-বিজ্ঞানের একটি শাখা। যা কিনা অর্থশাস্ত্র হিসেবেও পরিচিত। তবে অর্থনীতি মূলত একটি গ্রিক শব্দ “Oikonomia” শব্দ থেকে এসেছে। যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে “Economics”. 

অর্থনীতি মূলত ভোক্তার বিভিন্ন ভোগ্য পণ্য নিয়ে আলোচনা করে থাকে এবং সেগুলোকে সঠিক ভাবে তুলে ধরে। 

“Oikonomia” শব্দটিকে ভাঙলে মূলত দুটি শব্দের উৎপত্তি হয়। যেমনঃ “Oikos” এবং “Nemein”. “Oikos” শব্দের অর্থ হচ্ছে গৃহ আর “Nemein” শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যবস্থাপনা। আর এই দুটি শব্দ মিলে অর্থ দাঁড়ায় গৃহ ব্যবস্থাপনা। মূলত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল অর্থনীতিকে গৃহ ব্যবস্থাপনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। 

এতক্ষণ আমরা জানার এবং বুঝার চেষ্টা করলাম অর্থনীতি কি তা সম্পর্কে। তবে এখন আরেকটু বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করবো অর্থনীতি কাকে বলে সেটি সম্পর্কে। কারণ অর্থনীতি কাকে বলে এটি না জানা থাকলে আমরা মূলত এর গুরুত্বপূর্ণ মেসেজটিই পাবো না। 

চলুন তাহলে জেনে নেই, অর্থনীতি কাকে বলে সেটি সম্পর্কে। 

অর্থনীতি কাকে বলে?

মূলত সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই অর্থনীতির প্রচলন। আর সেই ঊষালগ্ন থেকেই অর্থনীতি সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অর্থনীতি কে বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমনঃ 

Paul A.Samuelson অর্থনীতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার গ্রন্থ Welfare-এ বলছেন- মানুষ কিভাবে অর্থের মাধ্যমে কিংবা অর্থ ছাড়া বিভিন্ন সম্পদের উৎপাদন কাজে নিয়োগের জন্য বাছাই কিংবা নির্বাচন করে এবং জনগন অথবা সমাজ সেটিকে ভবিষ্যতে ভোগের আশা নিয়ে কিভাবে বন্টন করে তার বিস্তারিত আলোচনাই অর্থনীতির বিষয়বস্তু। 

এদিকে J.S Mills বলেন, অর্থনীতি এমন এক ব্যবহারিক বিজ্ঞান যা কিনা সম্পদের উৎপাদন এবং বন্টন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। 

এখন আরো সহজ করে যদি বলি তবে,অর্থনীতি কাকে বলে অর্থনীতি হচ্ছে একটি সামাজিক বিজ্ঞান শাখা। এখানে সম্পদের উৎপাদন এবং সঠিক ভাবে সম্পদের বন্টন নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়। 

অর্থনীতির জনক কে?

এক কথায় বলা যায়, অর্থনীতির জনক হচ্ছেন Adam Smith. তিনি একজন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ। তিনি অর্থনীতিকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলছেন, অর্থনীতি হচ্ছে এমন এক বিজ্ঞান যা জাতি সমূহের সম্পদের প্রকৃতি এবং তার কারণ অনুসন্ধান করে। আর এই অর্থনীতি সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ “The Wealth of Nation”-এ। যা প্রকাশিত হয় ১৭৭৬ সালে। 

আমরা এতকিছু আলোচনার মাধ্যমে যেমন জেনেছি অর্থনীতি কাকে বলে এবং এর পাশাপাশি জেনেছি অর্থনীতির মূলত জনক কে তা সম্পর্কে। এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো অর্থনীতির পরিধি সম্পর্কে। চলুন জেনে নেই।

অর্থনীতির পরিধিসমূহ 

অর্থনীতির পরিধি সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায় অর্থনীতির পরিধি ব্যাপক। এর পরিধি ভাগ করা যায় বিভিন্ন ভাবে। যেমনঃ 

  • সামষ্টিক অর্থনীতি।
  • ব্যষ্টিক অর্থনীতি।
  • ইতিবাচক অর্থনীতি।
  • নীতিবাচক অর্থনীতি।
  • মেইনস্ট্রীম অর্থনীতি এবং 
  • হেটারোডক্স অর্থনীতি। 

এগুলো সম্পর্কে যদি বিস্তারিত ভাবে জানতে চাই তবে সর্বপ্রথম আমাদের জানতে হবে সামষ্টিক এবং ব্যষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে। কেন? তা বলছি নিচের আলোচনায়। 

সামষ্টিক অর্থনীতিঃ 

আমরা অনেকেই “Macro-economics” এর কথা শুনেছি। “Macro-economics” এর বাংলা প্রতিশব্দই হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতি। মুলত গ্রিক শব্দ Makros থেকেই এই Macro শব্দটি আগত। এর অর্থ “বড়”। গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করায় এর নাম দেয়া হয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতি। 

অর্থাৎ, অর্থনীতির যে শাখায় গোটা অর্থনীতি (যেমনঃ সামগ্রিক উৎপাদন, জাতীয় আয়, ভোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি) কে কেন্দ্র করে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয় তাকেই সামষ্টিক অর্থনীতি বলা হয়। 

আর এর জন্যই অধ্যাপক Ackley সব সময় এই সামষ্টিক অর্থনীতিকে একটি বড় হাতির সাথে তুলনা করে এসেছেন। যেহেতু এটি গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে থাকে। 

ব্যষ্টিক অর্থনীতি:

“Micro-economics” এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ব্যষ্টিক অর্থনীতি। Micro অর্থ আমরা সকলেই জানি “ক্ষুদ্র কিংবা ছোট”। এটিও একটি গ্রিক শব্দ Mikros শব্দ থেকে আগত হয়েছে। ব্যষ্টিক অর্থনীতি সামষ্টিক অর্থনীতির পুরো উলটো দিক বলা চলে। কারণ ব্যষ্টিক অর্থনীতি সাধারণত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। বলা চলে, ক্ষুদ্র একক কে পৃথক ভাবে এখানে আলোচনা করা হয়। তাই এটিকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলা হয়। 

সামষ্টিক এবং ব্যষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে তো আমরা জানলাম। এবার চলুন এদের মধ্যে মূলত পার্থক্য কোথায় সেটি জেনে নেই। 

সামষ্টিক অর্থনীতি এবং ব্যষ্টিক অর্থনীতি এর মধ্যে পার্থক্য

সামষ্টিক অর্থনীতি এবং ব্যষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। যেটি সম্পর্কে জানলে এই দুই অর্থনীতি সম্পর্কে আরো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া সম্ভব। যা বুঝার ক্ষেত্রেও সহজ করে দিবে বলে আশা করি। 

“Macro” এবং “Micro” শব্দ দুটির প্রচলন শুরু হয় ১৯৯৩ সালে ওসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Ragner Frisch এর মাধ্যমে। তিনিই মূলত এই দুটি অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেন। যেমনঃ

  • অর্থনীতিতে সামষ্টিক অর্থনীতি হলো এমন একটি শাখা যা অর্থনীতির সমগ্র অংশ নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, ব্যষ্টিক অর্থনীতি শুধুমাত্র অর্থনীতির একটি অংশ নিয়ে আলোচনা করে থাকে। 
  • সামষ্টিক অর্থনীতি সাধারণ জাতীয় আয়, জাতীয় উৎপাদন, সাধারণ মূল্যস্তর এগুলো নিয়ে আলোচনা করে থাকে। অপরদিকে, ব্যষ্টিক অর্থনীতি প্রতিটি শিল্প, প্রতিটি দ্রব্য, প্রতিটি ফার্ম পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনা করে থাকে। 
  • অর্থনীতির নিয়মকানুন সমূহকে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির কাজ। অন্যদিকে, ব্যষ্টিক অর্থনীতি বিভিন্ন উপকরণাদির আয়ের বন্টন সংক্রান্ত আলোচনা করে। 
  • সামষ্টিক অর্থনীতি একটি উদ্দেশ্যমূলক বিষয় কিন্তু ব্যষ্টিক অর্থনীতি, অর্থনীতির প্রতিটি শাখা উপর নির্ভর করে তার উদ্দেশ্য গুলো সম্পন্ন করে। 

সামষ্টিক অর্থনীতি এবং ব্যষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে জানলে বুঝা যায় পুরো অর্থনীতির ছক সম্পর্কে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে অর্থনীতির বিষয় গুলো ছাপ ফেলে যায় সেটি জানা সম্ভব হয় এই অর্থনীতির বিস্তারিত সম্পর্কে জানলে। আর তাই বলা হয়, সর্বপ্রথম সামষ্টিক অর্থনীতি এবং ব্যষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এবার আসি, অর্থনীতির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অর্থনীতি সম্পর্কে। জেনে নেই অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা সম্পর্কে। 

ইতিবাচক অর্থনীতি:

ইতবাচক অর্থনীতি, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় “Positive Economics”. অর্থনীতিতে প্রায় বেশির ভাগ সময় প্রয়োজন হয় ইতিবাচক বক্তব্য পর্যালোচনার। আর এই ইতিবাচক বক্তব্য পর্যালোচনাই হচ্ছে অর্থনীতিতে ইতিবাচক অর্থনীতি। 

ইতিবাচক অর্থনীতিতে বাস্তব তথ্য দ্বারা প্রমাণ হয় এমন সব তথ্য বেশি গ্রহণযোগ্য বলে বলা হয়। এ জাতীয় বাস্তব তথ্য ইতিবাচক অর্থনীতির আওতাভুক্ত বলা হয়ে থাকে। 

নীতিবাচক অর্থনীতি:

অনেকেই মনে করেন, নীতিবাচক অর্থনীতি মানে এখানে বোধহয় অনৈতিক কিছু আলোচনা কিংবা পর্যালোচনা করা হয় কিন্তু মোটেই তা নয়। 

“Normative Economics” এর বাংলা প্রতিরূপ হচ্ছে নীতিবাচক অর্থনীতি। এখানে মূলত নীতি এবং আদর্শমূলক বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয়। অর্থাৎ, অর্থনীতিতে ঠিক কোনটি করা উচিৎ আর কোনটি করা উচিৎ নয় সেটি নিয়ে আলোচনা করাই হচ্ছে নীতিবাচক অর্থনীতি। এখানে বাস্তব কোনো তথ্য থাকে না কিন্তু আলোচনা করার মাধ্যমে যেটি সঠিক অর্থনীতিতে সেটিই গ্রহণযোগ্যতা পায়। 

সুতরাং, অর্থনীতির এই ধাপ গুলো আলোচনার মাধ্যমে জানা যায় অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য এবং এটি সফল ভাবে পরিচালনা করার পন্থা। 

অর্থনীতি প্রশ্ন উত্তর

(০১) অর্থনীতি কি? 

উত্তরঃ সম্পদ আহরণ এবং সম্পদ সঠিক ভাবে ব্যবহার করা নিয়ে আলোচনা করাই হচ্ছে অর্থনীতি। 

(০২) অর্থনীতি কত রকম পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়? 

উত্তরঃ ২ রকম। যেমনঃ সাহিত্যিক পদ্ধতি এবং জ্যামিতিক পদ্ধতি। 

(০৩) অর্থনীতির মৌলিক সমস্যা কতটি? 

উত্তরঃ ৩ টি। 

(০৪) অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া কি? 

উত্তরঃ এটি হচ্ছে অর্থনীতির একটি শাখা যা অর্থনৈতিক সম্পদ বন্টন এবং প্রতিষ্ঠান করা নিয়ে আলোচনা করে। 

অর্থনীতি কাকে বলে অবশেষে বলা যায়, অর্থনীতি যেহেতু একটি সামাজিক বিজ্ঞান শাখা এবং বিশ্লেষণের একক তাই এটি সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা থাকলে সেটি অর্থনীতি ক্ষেত্রেই একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অর্থনীতি পরিধি এবং এর অর্থনিতির বিষয়বস্তু ব্যাপক। আর তাই বলা হয়ে থাকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অর্থনীতির কার্যাবলী অপরিহার্য। 

Leave A Reply

Your email address will not be published.