কুটির শিল্প কাকে বলে? কুটির শিল্পের গুরুত্ত্ব আলোচনা কর।

0

কুটির শিল্প কাকে বলে

বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প হচ্ছে কুটির শিল্প। এই শিল্পে জড়িয়ে আছে বাংলার সংস্কৃতি। যে শিল্প তৈরি করেছে গ্রাম বাংলার মানুষ। নিজেদের জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে এই শিল্পের উৎঘাটন করেছে গ্রাম বাংলার মানুষ। আর তাই অনেকেই এটিকে হস্তশিল্প বা গ্রামীণ শিল্পও বলে থাকে। বর্তমানে কুটির শিল্পের অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে বলে বলা হয়। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য কুটির শিল্প ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। 

 

আজকের আর্টিকেলটি কুটির শিল্প কাকে বলে বা কুটির শিল্পের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা। যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো কুটির শিল্প কাকে বলে এবং এর বিস্তারিত সম্পর্কে। 

 

চলুন তাহলে প্রথমেই জেনে নেই, কুটির শিল্প কাকে বলে সে সম্পর্কে। 

 

কুটির শিল্প কাকে বলে? 

 

যেসব কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের মূল্য ও আনুষঙ্গিক ব্যয় সমূহ পাঁচ লক্ষ টাকার নিচে এবং সেখানে কর্মরত জনবলের সংখ্যা দশ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাকেই কুটির শিল্প বলা হয়। 

 

আরো সহজ করে যদি বলি তবে, ঘরে বসে স্বল্প মূলধন নিয়ে ভারী কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই নিজেদের কারিগরী জ্ঞানের মাধ্যমে কোনো পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করাই হচ্ছে কুটির শিল্প। 

 

কুটির শিল্প কাকে তা জানার পর নিশ্চয়ই আমাদের প্রত্যেকের স্বচ্ছ ধারণা হয়েছে কুটির শিল্প সম্পর্কে। এবার আসুন জেনে নেই কুটির শিল্প এর কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। 

আর ও পড়ুন:

কুটির শিল্প এর বৈশিষ্ট্য 

 

  • স্বল্প মূলধনঃ কুটির শিল্প শুরু করতে বরাবরই খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না। স্বল্প মূলধনেই শুরু করা যায় কুটির শিল্প। যে কেউই শুরু করতে পারে এই কুটির শিল্প। প্রয়োজন শুধু ধৈর্য্য এবং পরিশ্রম। 

 

  • পরিবার কেন্দ্রিকঃ কুটির শিল্প সাধারণত পরিবার কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। পরিবারের সদস্য গুলো মিলেই এই কুটির শিল্প শুরু করে কিংবা শুরু করা যায়। 

 

  • ছোট পরিসর/ আয়তনঃ কুটির শিল্প শুরু করার চমৎকার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি আয়তনে ছোট এবং এই শিল্প ছোট্ট পরিসরে শুরু করা যায়। 

 

  • অবস্থানঃ কুটির শিল্প চাইলে যেখানে সেখানেই শুরু করা যায়। এর অবস্থান সহজ বিধায় যে কেউ এই শিল্প শুরু করতে পারে। বলা হয়ে থাকে, কুটির শিল্প নিজস্ব ঘর থেকেই শুরু করা হয়। 

 

  • কাঁচামালঃ কুটির শিল্পের কাঁচামাল সহজসাধ্য। স্থানীয় ভাবেই এই শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ করা যায়।  

 

কুটির শিল্প কাকে বলে এবং এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তো জানলাম। এবার চলুন একটু কুটির শিল্প এর ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় যাওয়া যাক। 

 

কুটির শিল্প এর ইতিহাস 

 

বলা চলে, কুটির শিল্প এর ইতিহাস প্রাচীন। এই শিল্প সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে মোঘল যুগে। তৎকালীন যুগে পৃথিবী বিখ্যাত মসলিন শাড়ি উৎপাদিত হত বাংলার বুকে। তখনকার যুগে এটি নিয়ন্ত্রণ করতো প্রাক-ব্রিটিশরা। তারা সুতিবস্ত্র উৎপাদন এবং বিভিন্ন কারুশিল্পিতে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে সুসংগঠিত ছিল বলে শোনা যায়। সে সময় ইংরেজ এবং ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সহ বিভিন্ন ইউরোপীয় বনিকরা কুটির শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানিতে সহায়তার জন্য অর্থ জোগান দিয়ে থাকত। যদিও পরবর্তীতে এরা বাঙ্গালিদের উপর নির্যাতন চালানো শুরু করে। 

 

জানা যায়, ১৮১৫ সালে এদেশ থেকে এক কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকার কাপড় রপ্তানি হয় যা পরবর্তীতে তা শূন্য কোটায় পৌঁছায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে একটি মারাত্মক ক্ষতি হয় কুটির শিল্প জগতে। কারণ কুটির শিল্পের সাথে প্রধানত জড়িত ছিল হিন্দু মহাজন এবং ব্যবসায়ীরা। দেশ বিভাগের জন্য তারা এদেশ ত্যাগ করে যার ফলে কুটির শিল্প জগত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে কেটে যায় অনেক গুলো বছর। 

 

১৯৫৪ সালে পুনরায় যুক্ত ফ্রন্ট সরকার বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কে নতুন ভাবে শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারপর পূর্ব পাকিস্তান সরকারি আইনের মাধ্যমে ১৯৫৭ সালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়। যার নামকরণ করা হয় “বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন।” যার সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে “বিসিক।” এই প্রতিষ্ঠান কুটির শিল্প কে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রকল্পে বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে থাকে বর্তমানে। যদিও বলা চলে বর্তমানে কুটির শিল্প অবনতির পথে।  

 

কুটির শিল্প এর ইতিহাস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়ার পর এবার চলুন জেনে নেই প্রকৃত পক্ষে কুটির শিল্প এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। পাশাপাশি জেনে নিব কুটির শিল্প এর অবনতি সম্পর্কে। 

 

কুটির শিল্প এর বর্তমান অবস্থা এবং অবনতি এর কারণ 

 

বাংলাদেশে বর্তমানে কুটির শিল্প এর অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে বলে দেখা যায়। বর্তমানে কুটির শিল্প প্রায় নেই বললেই চলে। ধীরে ধীরে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই কুটির শিল্প। এই যে কুটির শিল্প আস্তে আস্তে হারিয়ে গিয়েছে বা যাচ্ছে এবং এর অবনতি এর কারণ যদি বলা হয় তাহলে বলা যায়, বড় বড় শিল্প কারখানা তৈরি। তারও আগে থেকে যদি বলা হয় তাহলে, যখন থেকে মুসলমান যুগ পার হওয়ার পর ইংরেজ বণিকরা সস্তায় বিদেশি কাপড় এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে স্বল্প মূল্যে দ্রব্য সামগ্রীর আগমন ঘটালো তখন থেকেই মূলত বাংলার কুটির শিল্প এর অবনতি শুরু হয়। গ্রাম বাংলার কুটির শিল্পীরা যোগ দিতে শুরু করে বিভিন্ন কলকারখানায়। তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলেই অনেকেই এই কুটির শিল্প থেকে ইস্তফা দিচ্ছে নিজেদের। বিভিন্ন দ্রব্যাদির বাইরের চাকচিক্য দেখে ক্রেতারাও ঝুকে যাচ্ছে বিদেশি পণ্যের দিকে। ফলে দিন যত পার হচ্ছে কুটির শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে।

 

কুটির শিল্প এর শ্রেণীবিভাগ

 

কুটির শিল্প এর শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে যদি বলা হয় তাহলে, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বলা হয় কুটির শিল্প ৮ প্রকার। যেমনঃ মৃৎ শিল্প, বস্ত্র শিল্প, পাট শিল্প, বেত-বাঁশ শিল্প, নকশিকাঁথা শিল্প, খনিজ শিল্প, ধাতব শিল্প এবং মুদ্রণ ও কাগজ শিল্প। 

 

>>> সবশেষে বলা যায়, কুটির শিল্প আমাদের দেশের জন্য সম্পদ। কুটির শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না কুটির শিল্প কাকে বলে বা এর গুরুত্ব কতটুকু। তাই আমাদের সকলের উচিৎ কুটির শিল্প কে পুনরায় উজ্জীবিত করা বা উদ্যোগ নেয়া। 

Leave A Reply

Your email address will not be published.